৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১, ১৮ রজব ১৪৪৫
`

ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলার আম বয়ানে বিশ^ ইজতেমা শুরু

-

রাজধানীর উপকণ্ঠে টঙ্গী তুরাগ নদের তীর ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা গতকাল শুরু হয়েছে। বাদ মাগরিব ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলার আম বয়ানের মধ্য দিয়ে ইজতেমা শুরু হয়। উর্দু ভাষায় তার প্রদত্ত বয়ান সমবেত মুসল্লিদের তরজমা করে শোনান তাবলিগ জামাতের স্বাগতিক বাংলাদেশের শীর্ষ মুরব্বি মাওলানা জুবায়ের। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তাবলিগ জামাতের বৃহত্তর শূরায় নেজামের মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান।
তিনি জানান, এবারের ইজতেমা ওলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে শূরায়ী নেজামের (জুবায়েরপন্থী) অধীনে দুই ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রথম ধাপ আজ শুক্রবার ৩১ জানুয়ারি ও আগামী ১, ২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এরপর দ্বিতীয় ধাপে বিশ্ব ইজতেমা আগামী ৩, ৪ ও ৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। এবার বিশ্ব ইজতেমা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পুরো বাংলাদেশকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে এবং কোন ধাপে কোন অঞ্চল অংশগ্রহণ করবে তা ইতোমধ্যে জেলা দায়িত্বশীলদেরকে মুরুব্বিদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। প্রথম ধাপে অংশগ্রহণ করছেন গাজীপুর, টঙ্গী, ধামরাই, গাইবান্ধা, মিরপুর, কাকরাইল, নাটোর, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, দোহার, ডেমরা, নড়াইল, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, নবাবগঞ্জ, নীলফামারি, দিনাজপুর, রংপুর, বগুরা, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, ভোলা, চুয়াডাংগা, কুষ্টিয়া, যশোর, মাগুরা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, নেত্রকোনা, শেরপুর, ফরিদপুর, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বি.বাড়িয়া, খুলনা, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, ঝিনাইদহ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পিরোজপুর, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, রাজবাড়ী জেলার মুসল্লিরা। এই ধাপে ঢাকার একাংশসহ মোট ৪১টি জেলা অংশগ্রহণ করছে।
দ্বিতীয় ধাপে অংশগ্রহণ করছেন যাত্রাবাড়ী, কেরানীগঞ্জ, মোহাম্মাদপুর, মুন্সীগঞ্জ, জামালপুর, মানিকগঞ্জ, জয়পুরহাট, সিলেট, সিরাজগঞ্জ, মেহেরপুর, টাঙ্গাইল, পাবনা, নরসিংদী, সাভার, কিশোরগঞ্জ, কক্সবাজার, নোয়াখালী, গোপালগঞ্জ, ঝালকাঠি, বরগুনা, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, নওগাঁ, বান্দরবন জেলার মুসল্লিরা। এই ধাপে ঢাকার একাংশসহ ২২টি জেলা অংশগ্রহণ করছেন। গত মঙ্গলবার বিকেল থেকেই প্রথম ধাপে ইজতেমায় অংশগ্রহণের জন্য বিভিন্ন খিত্তা ও পয়েন্টের জিম্মাদারগণ এসে নিজ নিজ দায়িত্ব গ্রহণ করেন। গতকাল সকাল থেকেই দেশী-বিদেশী মেহমান ও সাধারণ মুসল্লি ইজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করেন।
দুই ধাপে ইজতেমা ইজতেমা করার কারণ হিসেবে শূরায়ী নেজামের মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেন, তাবলিগের মেহনত একটি দ্বীনের অন্যতম মেহনত এবং দ্বীনের ধারক বাহক হচ্ছেন হজরত ওলামায়ে কেরাম। ধর্মপ্রাণ মুসল্লি ভাইয়েরা ওলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে থেকেই তাবলিগের মেহনত করতে চান। এই সংখ্যাটা এত ব্যাপক যে টঙ্গী মাঠের ১৬০ একর জায়গায় তাদের অবস্থান করাটা খুবেই কষ্টদায়ক হয়ে যায়। গত কয়েক বছর শূরায়ী নেজামের অধীনে যেসব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়েছে, আপনারা জেনে থাকবেন আমাদের সাথীরা স্থায়ী টয়লেটের ছাদগুলোর ওপরে, আশেপাশে ছোট ছোট মাঠগুলোর ভেতরে এবং রাস্তায় ধুলাবালুর ভেতর আমাদের সাথীরা কষ্ট করে অবস্থান করেছে। এবার দুই ধাপে ইজতেমা হওয়ার কারণে তাদের কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হবে।
তিনি আরো জানান, পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকেও যথেষ্ট আন্তরিকতার সাথে ইজতেমা আয়োজনে সহযোগিতা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন ওয়াচ টাওয়ার তৈরি করেছে এবং সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে সিভিল ড্রেসে বিভিন্ন খিত্তায় খিত্তায় তারা অবস্থান করবেন।
গড়ে তোলা হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা : জিএমপির উপপুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ, অপরাধ) এন এম নাসির উদ্দিন জানান, এবার সাত সহস্রাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ইজতেমা ময়দানে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন। তাদেরকে তাবলিগ জামাতের পক্ষ থেকে দশ সহস্রাধিক স্বেচ্ছাসেবক সহযোগিতা করবেন। পুরো ময়দান ও আশপাশে ৩৩৫টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। ড্রোন ও হেলিকপ্টার নজরদারি করবে ইজতেমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। ২০টি চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে সন্দেহভাজনদের পর্যবেক্ষণে। ওয়াচ টাওয়ার থেকে বাইনোকুলারে নজরদারি করবে নিরাপত্তা বাহিনী। নৌপুলিশের স্পিডবোট টহল থাকবে তুরাগ নদে। সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন প্রতিটি খিত্তায়।
নিজামুদ্দিনের ইজতেমা নিয়ে অনিশ্চয়তা : এ দিকে সরকারি সিদ্ধান্তে আগামী ১৪, ১৫ ও ১৬ জানুয়ারি তাবলিগ জামাতের নিজামুদ্দিন (সাদ) অনুসারীদের বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের কথা থাকলেও গত জোড় ইজতেমায় টঙ্গীর ময়দানে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের মামলায় তাদের শীর্ষ দায়িত্বশীলরা আসামি হওয়ায় এবং ইজতেমা নিয়ে সরকারের সাথে নানা টানাপড়েনে সাদ পন্থীদের আসন্ন ইজতেমা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। নিজামুদ্দিনের মিডিয়া সমন্বয়ক আবু সাঈম বলেন, এবার ইজতেমা করার পর পরবর্তীতে টঙ্গীর ময়দানে আমরা আর বিশ্ব ইজতেমা করতে পারব না সরকারের পক্ষ থেকে এমন লিখিত আন্ডারটেকেন দিতে বলা হচ্ছে। কিন্তু আমরা বলছি ইজতেমা ময়দানে ইজতেমা করার অধিকার আমাদেরও আছে। আমরা টঙ্গীর ময়দানে পরবর্তীতে ইজতেমা না করার ব্যাপারে কোনো লিখিত দেবো না।


আরো সংবাদ



premium cement